Friday, November 30, 2012

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন?


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বানীঃ “মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়”। (সূরা ইনসান ১-৩)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানবজাতিকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন, তাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি এবং ভাল-মন্দের জ্ঞান দান করেছেন৷ সামান্য বীর্য কণা থেকে সৃষ্টি করে আল্লাহ মানুষকে অনেক উত্তম অবস্থানে নিয়ে এসেছেন, অন্যান্য প্রানী থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন৷ তাদের জীবিকার প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস তিনিই সরবরাহ করছেন৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ “নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি”। (সূরা, বনী ঈসরাঈল ১৭-৭০)

আল্লাহ মানবজাতির জন্য এ যমীনকে সম্পূর্ণ বসবাস উপযোগী করে দিয়েছেন, আসমানকে তাদের জন্য করেছেন ছাদ স্বরূপ৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ “হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে। যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান”। (সূরা, বাকারা ২:২১-২২)

এতসব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এমনি এমনিই দেননি৷ এসব কিছুর পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ “তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?” (সূরা, মু'মিনুন ২৩:১১৫)

মানুষ সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তায়ালা বলেনঃ "আমি মানুষ এবং জিনকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য"৷ (যারিয়াত ৫১:৫৬)
আয়াতের এর ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেন, আমার (আল্লাহর) একত্বকে মেনে নেয়ার জন্যই আমি তাদের সৃষ্টি করেছি৷ সুতরাং তাওহীদকে মেনে নিয়ে এককভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করার জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন৷ আর এ দিকেই সমস্ত নবী-রাসূলগণ আহ্বান করেছিলেনঃ "আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরন করেছি আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য৷" (সূরা, নাহল ১৬:৩৬)
সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর হক্ হচ্ছে এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা৷ রাসূল (সঃ) বলেছেন-"বান্দার প্রতি আল্লাহর হক্ হচ্ছে তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না৷" (মুসলিম, ইফাবা/৫০)

সুতরাং যে ব্যক্তি শরীকবিহীন অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে পূরণ করল, আল্লাহর হক্ আদায় করল৷ আর যে ব্যক্তি আল্লাহর শরীক করল সে সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর হক্ আদায় করল না৷ সে তার নিজের ধ্বংস ডেকে আনল, সে কাফির, মুশরিক এবং অকৃতজ্ঞ৷

অতএব একজন মানুষের উচিত তার নিজের মুক্তির জন্য নিম্নের তিনটি বিষয়ে জানা এবং নিজের জন্য মেনে নেয়াঃ

১৷ এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করা;
২৷ আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা;
৩৷ আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে রব এবং ইলাহ হিসেবে গ্রহন না করা;

আর কালেমার স্বীকৃতির মাধ্যমে উপরোক্ত তিনটি জিনিসেরই স্বীকৃতি দেয়া হয়।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...